২৫ বছর আগে ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যার মামলায় ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। মামলার বাকি ৬ আসামি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্ত্তীর আদালত এই রায় ঘোষণা করেন। যাবজ্জীবনের পাশাপাশি তিন জনকে ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে ১ মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে তাদের। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া অপর আসামিরা হলেন, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকী। আর মামলাটি থেকে খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন- এজাহারনামীয় তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর-রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, ফারুক আব্বাসী, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী। গত ২৯ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক রায় ঘোষণার এ তারিখ ঠিক করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাদিয়া আফরিন শিল্পী এতথ্য নিশ্চিত করেছেন। আসামিদের মধ্যে ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, সেলিম খান, হারুন অর-রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন ও আদনান সিদ্দিকী পলাতক রয়েছেন। মামলাটি জামিনে থাকা আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন ও ফারুক আব্বাসী আজ রায় ঘোষণার আগে হাজিরা দেন। তবে পরে অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে তারিক সাঈদ মামুন ও ফারুক আব্বাসী আদালত চত্বর থেকে পালিয়ে যান। পরে রায় ঘোষণার আগে আদালত এই দুজনের জামিন বাতিল করে পলাতক ঘোষণা করেন। মামলাটিতে ১৬ বছর ধরে কারাগারে থাকা আসামি সানজিদুল ইসলাম ইমনকে গতকাল বৃহস্পতিবার কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
গত ২৮ জানুয়ারি মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক। এরপর আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তারিখ ধার্য করেন। মামলাটির ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত। জানা যায়, রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান নায়ক সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। তবে রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, এই মামলার সিডি (কেইস ডকেট) পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, সিডি গায়েব করা হয়েছে। আসামি আদনান সিদ্দিকী ঘটনাস্থল থেকে ধরা পড়েন। তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন, তবে সেটাও অনেকটা গা বাঁচিয়ে দেওয়ার মতো। সোহেল চৌধুরী কোনও অখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন না, অথচ তিনি খুন হলেন। ট্রাম্পস ক্লাবের ম্যানেজার বলেছেন, জেনেছি সোহেল চৌধুরী নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। অথচ এ ঘটনায় আহত অপর একজনকেও হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এত বছর ধরে ফেলে রেখে মামলার বিচার না হওয়ায় মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে উল্লেখ করে বিচারক বলেন, প্রতিটি মৃতের আত্মা বিচার চায়। আদনান সিদ্দিকী কয়েকজনের নাম বলেছেন নিজের গা বাঁচিয়ে। নিজের গা বাঁচিয়ে সাক্ষ্য দিলেও সে অন্যের নাম সত্য বলতে পারে। তবে যাদের নাম বলছেন, তাদের কাছ থেকে কোনও রিকভারি হয় নাই। তারা যে সেখানে ছিল, সেটা বিশ্বাস করার কারণ আছে। তারপরও আদনান সিদ্দিকী যাদের নাম বলছে, তাদের মধ্যে একজনও যদি সেখানে না থাকেন বা সে যদি অন্য একজনের নামও অন্তর্ভুক্ত করে থাকে; তাহলে তার ভাষ্য অনুযায়ী আসামিদের গুরুদণ্ড দেওয়া ঠিক হবে না। রায়ে বিচারক আরও বলেন, আসামি আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ ও আদনান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাপ্ত সাক্ষ্য ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। বান্টির বক্তব্যে ইমন ও আশীষ রায় চৌধুরীর নাম আসলেও ঘটনাস্থলে তাদের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়নি, বিধায় তাদের খালাস দেয়া হলো।
রায় ঘোষণা শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেলে আমরা দেখবো, আইনের কোনও ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা। এরপর সিদ্ধান্ত নেবো, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে যাবো কিনা? সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, বিচারক সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যেটা ভালো বুঝেছেন, সেই রায় দিয়েছেন। এখানে আমার কোনও অভিমত নেই। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পরে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো, আপিল করবো কিনা। আসামি ইমনের পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মাদ বলেন, রায়ে আমরা অনেক খুশি। আসামি ইমন দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এই মামলায় কারাগারে আটক ছিল। আসামি ইমন এ মামলায় কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। বিনা কারণে ১৬ বছর ধরে জেল হাজতে তাকে আটক রাখা হয়েছিল। আমরা এজন্য খুশি আসামি ইমন জামিন পেয়েছেন। আদালত ন্যায় বিচার করেছেন।

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা
আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন
- আপলোড সময় : ১০-০৫-২০২৪ ০৩:০৪:০৪ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১০-০৫-২০২৪ ০৩:০৪:০৪ অপরাহ্ন


নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ